ঘড়ির কাঁটায় সময় তখন দুপুর ১২টা। রাজধানীর ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের সামনের চিত্র আজ রোববার অন্য দিনের চেয়ে একটু আলাদা। প্রতিবছর এইচএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশের দিনে কলেজের সামনে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের ভিড় দেখা যায়। কিন্তু এবার করোনার কারণে শিক্ষার্থীদের ভিড় বা উচ্ছ্বাস কোনোটাই চোখে পড়েনি। কিছু শিক্ষার্থী এলেও তাঁদের মুখে ছিল মাস্ক।
করোনার কারণে বেশির ভাগ শিক্ষার্থীই অনলাইনে পরীক্ষার ফলাফল জেনেছেন। বেলা বাড়লে কিছু শিক্ষার্থী এসে ভালো ফলের আনন্দ সহপাঠীদের সঙ্গে ভাগাভাগি করেন। দুপুরে সেই সংখ্যাও কমে আসে। কলেজ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তারা শিক্ষার্থীদের আসতে নিষেধ করেনি। করোনা সংক্রমণের কথা ভেবেই শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের উপস্থিতি অনেক কম।
রাজধানীর বেইলি রোডে ভিকারুননিসার মূল শাখায় আজ দুপুরে সাংবাদিকদের সামনে কলেজের শিক্ষার্থীদের ফলাফল তুলে ধরেন অধ্যক্ষ কামরুন নাহার। তিনি বলেন, এবারের ফল অনেক সন্তোষজনক। গত বছর করোনার কারণে এইচএসসি পরীক্ষায় ‘অটো পাস’ হয়েছিল। সে তুলনায় এবারের পরীক্ষার ফল অনেক ভালো। মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষায় কোনো শিক্ষার্থী অকৃতকার্য হননি।
সরাসরি ক্লাস কম হয়েছে, এর প্রভাব ভবিষ্যতে পড়বে কি না, এ প্রশ্নের উত্তরে ভিকারুননিসার অধ্যক্ষ বলেন, ‘আমি সেটা মনে করি না। যে কয় দিন ক্লাস হয়েছে, শিক্ষার্থীরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে করেছে, পরীক্ষা দিয়েছে। পরীক্ষার সময় তাদের সঙ্গে কথা বলে জেনেছি, তারা অত্যন্ত আনন্দের সঙ্গে সশরীর পরীক্ষা দিতে পেরেছে।’
ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এবার এইচএসসি পরীক্ষা দিয়েছিলেন ২ হাজার ২৩০ জন। পাসের হার ৯৯ দশমিক ৯১ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছেন ২ হাজার ৮০ জন। জিপিএ-৫ পাওয়ার হার ৯৩ দশমিক ৩৫ শতাংশ। বিজ্ঞান বিভাগের দুজন পরীক্ষায় অকৃতকার্য হয়েছেন। তবে শারীরিক অসুস্থতার কারণে এই দুজন অকৃতকার্য হয়েছেন বলে দাবি করেছে কলেজ কর্তৃপক্ষ।
রোববার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে কলেজের মূল ফটকের সামনে পাওয়া গেল ৩ শিক্ষার্থীকে। তাঁরা অভিভাবকের সঙ্গে এসেছেন। তাঁদের একজন বিজ্ঞান বিভাগ থেকে পরীক্ষায় অংশ নেওয়া সামরিন শামস। রাজধানীর ইস্কাটনের বাসায় বসে মুঠোফোনে চেষ্টা করেও ফল জানতে পারেননি। পরে মাকে নিয়ে কলেজে চলে এসেছেন। এই প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা বলতে বলতেই মুঠোফোনে তাঁর ফল চলে আসে। সামরিন শামস বলেন, ‘এইমাত্র খবর পেলাম জিপিএ-৫ পেয়েছি। ফল পেতে সময় লাগছিল বলে কলেজে আসা। গত দুই বছরে আমাদের কম ক্লাস হয়েছে, অনলাইনের কারণে পড়ালেখার ধরন পরিবর্তন হয়েছে। তবু ভালো ফল এসেছে বলে অনেক খুশি।