পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পরে বিনিয়োগকারীদের দৃষ্টি পরে কুয়াকাটায়। দেশ-বিদেশের বিভিন্ন বিনিয়োগকারী বিনিয়োগ করা শুরু করে কিন্তু জমি কেনা-বেচায় এবং স্থাপনা নির্মাণের ওপর বিভাগীয় কমিশনারের অনুমতি জটিলতার ভোগান্তিতে বর্তমানে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০১২ সালে কুয়াকাটাসহ আশেপাশের বেশ কয়েকটি এলাকার ওপরে পর্যটনকেন্দ্রের মাস্টারপ্ল্যান বাস্তবায়নের নিরিখে এ অনুমতি পদ্ধতি চালু করা হয়। স্থানীয় পর্যটন ব্যবসায়ীরা বলছেনে জমি ক্রয়-বিক্রয় কিংবা স্থাপনা নির্মাণের ক্ষেত্রে বিভাগীয় কমিশনারের কাছে বারবার আবেদন করেও অনুমতিপত্র না পাওয়ায় অনেক বিনিয়োগকারী বিনিয়োগ শুরু করেও কাজ বন্ধ রেখেছেন; তবে কুয়াকাটা বিচ ম্যানেজমেন্ট কমিটি বলছে শিগগির অনলাইনের মাধ্যমে এ অনুমতি পদ্ধতি সহজ করা হবে।
দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম এই সমুদ্র সৈকতে পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পরে পর্যটকদের আগমন দ্বিগুণ হলেও পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা তৈরি করতে পারছেন না ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন, সরকার যদি এ অনুমতি পদ্ধতি একটু সহজ করে বিনিয়োগকারীদের সুযোগ করে দেয় তাহলে আগামী তিনমাসে সরকার ২০০ কোটি টাকা রাজস্ব পেতে পারে নতুবা এ রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হবে সরকার। উন্নত সেবাও পাচ্ছেন না পর্যটকরা।
এফবিসিসিইয়ের পরিচালক ও সেঞ্চুরি গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম জি আর নাসির মজুমদার বলেন, বর্তমানে কুয়াকাটা অভিভাবকহীন শহরে পরিণত হয়েছে। সরকার মাস্টারপ্ল্যানের দোহাই দিয়ে বিনিয়োগকারীদের আস্থা হারাচ্ছে। আবেদন করা সত্ত্বেও আমরা খুব সহজে জমি ক্রয়-বিক্রয়ের অনুমতি পাচ্ছি না। এই পদ্ধতিটা যদি পৌরসভাকে দেওয়া হয় তাহলে আমাদের ভোগান্তি কমবে। নয়তো আমরা যারা বিনিয়োগকারী তারা কুয়াকাটা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবো।
ট্যুর অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব কুয়াকাটার (টোয়াক) প্রেসিডেন্ট রুমান ইমতিয়াজ তুষার বলেন, বর্তমানে যে পরিমাণ আবেদন সরকারের কাছে জমা রয়েছে সেগুলো একটু সহজ করে দিলে সরকার এখান থেকে প্রায় দেড়-দুইশো কোটি টাকা রাজস্ব পেতে পারে, নতুবা এই রাজস্ব হারাবে। কুয়াকাটা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবেন পর্যটকরা। বর্তমানে কুয়াকাটায় আগত পর্যটকদের চাহিদামতো শতভাগ রাতযাপনের সুযোগ-সুবিধা নেই। কুয়াকাটার স্বার্থে এখন বিনিয়োগকারীদের সহযোগিতা করাটা জরুরি।
কুয়াকাটা পৌরসভার মেয়র আনোয়ার হাওলাদার বলেন, পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পরে কুয়াকাটায় বিনিয়োগকারীরা আসতে শুরু করেছেন। তবে স্থাপনা নির্মাণের ক্ষেত্রে জটিলতা দেখা দেওয়ায় তারা মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। তাদের এ হয়রানি বন্ধ করার জন্য সরকার যদি অনুমতির বিষয়টি সারা দেশের মতো পৌরসভার আওতায় নিয়ে আসে তাহলে অনেকটা স্বস্তি পাবে এসব বিনিয়োগকারী এবং সরকারও মোটা অংকের রাজস্ব পেতে পারে।
কুয়াকাটা বিচ ম্যানেজমেন্ট কমিটির সদস্য সচিব ও কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, কুয়াকাটা সরকারের একটি বিশেষায়িত এলাকা। এখানে মাস্টারপ্ল্যান বাস্তবায়নের কাজ চলমান। বিভিন্ন স্থাপনা তৈরির ক্ষেত্রে বিভাগীয় কমিশনারের অনুমতি প্রয়োজন। কিন্তু বিনিয়োগকারীরা আবেদন করছেন না; তবে এটাকে সহজ করতে অনলাইন সিস্টেম তৈরি করা হচ্ছে। শিগগির এটার একটি সমাধান আসবে।