চুলের ছাঁট পছন্দ না হওয়ায় এলাকার মেম্বারের ভাইয়ের হাতে নির্যাতিত হয়েছেন এক স্কুল শিক্ষার্থী। ৭ম শ্রেণির ওই স্কুল শিক্ষার্থীকে প্রকাশ্যে বেধড়ক মারধর ও নির্যাতনের একটি ভিডিও এরইমধ্যে ভাইরাল হয়েছে।
ভিডিওতে দেখা গেছে, অনেক কাকুতি মিনতি করেও মেম্বারের ভাইয়ের নির্যাতন থেকে রেহাই পাননি নির্যাতনের শিকার ওই স্কুল শিক্ষার্থী।
জানা গেছে, অভিযুক্তের নাম মো. বশির দফাদার। তিনি চর কাজল ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. মনির দফাদরের ছোট ভাই। নির্যাতনের ঘটনাটি পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলার চরকাজল ইউনিয়নের চরকাজল নতুন বাজার জামে মসজিদের সামনে ঘটেছে বলে জানা গেছে।
সোমবার (২৬ জুন) সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হলে ভিডিওটি উপজেলা নির্বাহী অফিসারের দৃষ্টিগোচর হয়। তাৎক্ষণিকভাবে তিনি ওই ইউনিয়নের ইউপি সদস্য মনির দফাদরকে শোকজ করেন। বিস্তারিত জানতে ইউপি সদস্য মনির ও তার ভাই অভিযুক্ত বশির দফাদারের কল দেয়া হলেও দুপুর থেকে তাদের উভয়ের ফোন বন্ধ থাকায় তাদের বক্তব্য জানা যায়নি। এ ব্যাপারে জানতে গলাচিপা থানার ওসি সুনিত কুমার গায়েনকে একাধিকবার কল দেয়া হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।
এ প্রসঙ্গে ইউএনও মো. মহিউদ্দিন আল হেলাল জানান, শোকজের জবাব সন্তোষজনক না হলে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
জানা গেছে, মনির মেম্বার ও তার আত্মীয়-স্বজনরা স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী হওয়ায় এলাকাবাসী সরাসরি এ ব্যপারে মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছে না। অভিযুক্ত ও তার ভাই বিষয়টি ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা চালাচ্ছেন বলেও অভিযোগ তাদের।
ভাইরাল হওয়া তেরো মিনিটের ওই ভিডিওতে দেখা যায়, শিমুলকে চড় মেরে মাটিতে ফেলে তার বুকের ওপর পা দিয়ে চেপে ধরে আছে অভিযুক্ত বশীর। এ সময় পাশ থেকে কয়েকবার “থাক মাফ করে দে” বলতে শোনা যায় এক মহিলাকে।
নির্যাতনের শিকার শিমুলের মা জামিনুর বেগম জানান, গত রমজান মাসের কোনো একদিন এসার নামাজের আগে নতুন বাজার মসজিদের সামনের পুকুরের পাড়ে বসে ছিল তার ছেলে শিমুল। এ সময় মনির মেম্বারের ভাই বশির দফাদার শিমুলের মাথার চুলের ছাঁট দেখে নানা ধরনের প্রশ্ন করেছিল। এক পর্যাযে শিমুল বলেছে যে, এখন তো সবাই চুলের এরকম ছাঁট দেয়। তাছাড়া স্যারেরা যে রকম ছাঁট দিতে বলেছেন আমি সে রকম ছাঁটই দিছি। আরও অনেকেই তো এরকম ছাট দেয়। তাদেরকে কিছু না বলে আমাকে কেনো বলছেন। শিমুলের মুখে এ কথা শুনে তাকে মারধর করে বশির। তখন পুকুর পাড় থেকে ধরে নিয়ে মসজিদের লোকজনের সামনেও শিমুলকে বেধড়ক মারধর করে বশির। পরে আমি বিষয়টি দফাদারদের জানালে তারা বলে, বাচ্চা পোলাপান ভুল করেছে তাই শাসন করা হয়েছে।
নাম না প্রকাশের শর্তে স্থানীয় এক ব্যবসায়ী জানান, দফাদারদের অত্যাচারে এলাকাবাসী অতিষ্ট। মনির মেম্বারসহ তারা তিনভাই এলাকায় ত্রাস সৃষ্টি করেছে। সম্প্রতি ছাগল চুরির একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করেও প্রকাশ্যে মারধর করছে কয়েকজনকে। তাদের ভয়ে কেউ কোনো অভিযোগ তো দুরের কথা টু শব্দটিও করতে পারে না।
তিনি আরও জানান, নির্যাতনের শিকার শিমুল আর বশির দফাদারের ছেলে মিসকাত পরস্পরের বন্ধু। তারা একই ক্লাসে পড়াশোনা করে। শিমুলকে যখন তার মাথার চুলের কাটিংয়ের বিষয়ে জানতে চেয়েছে তখন শিমুল বলেছে ‘আপনার ছেলেও তো এরকম কাটিং দিয়েছে। তাকে বারণ না করে আমাকে কেন করছেন?এই কথা বলার সাথেসাথে বশির দফাদার শিমুলকে মারধর করতে শুরু করে।
ইউএনও মো. মহিউদ্দিন আল হেলাল আরও জানান, ওই এলাকার নোমান নামের এক ব্যক্তি আজকে বশির দফাদারের বিরুদ্ধে আমার কাছে একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। সেটিও তদন্ত করা দেখা হবে। তদন্তে প্রমাণ পাওয়া গেলে বশিরের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এ সময় ইউএনওকে প্রশ্ন করা হয়, স্কুলছাত্রকে প্রকাশ্যে নির্যাতন আর আজকের ভুক্তভোগীর অভিযোগ একই ব্যক্তির বিরুদ্ধে কি না? উত্তরে ইউএনও জানান, হ্যাঁ। অভিযুক্ত একই ব্যক্তি বশির দফাদার। ভিডিওতে যাকে দেখা গেছে আজকে তার বিরুদ্ধ্বেই অন্য আরেকজন লিখিত অভিযোগ দিয়ে গেছে আমার কাছে। দুটি বিষয়ই খতিয়ে দেখা হচ্ছে।