চাঁপাইনবাবগঞ্জ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে দালালদের হয়রানি ও ভোগান্তির অন্তহীন অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগীরা। ছাত্রলীগের নাম ভাঙিয়ে চলছে এসকল দালাল সিন্ডিকেট। পাসপোর্ট অফিসে দালালদের অনিয়ম দুর্নীতি কিছুতেই থামছেনা। যার ফলে কাংখিত সেবা পেতে বেগ পাচ্ছেন পাসপোর্ট করতে আসা সাধারণ ব্যক্তিরা। পাসপোর্ট অফিসের কর্মকর্তা দালালদের ফাইল জমা না নিলেই হামলার শিকার হচ্ছেন, এ চিত্র প্রায় প্রতি দিনের।
দিন দিন বাড়ছে পাসপোর্ট অফিসের আশেপাশে থাকা দালালদের অনিয়ম ও ভোগান্তি। দালালদের অনিয়ম দুর্নীতি যেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের চিরচেনা বন্ধু হয়ে দাঁড়িয়েছে। দালালদের কারণে পদে পদে টাকা গুনতে হয় পাসপোর্ট করতে আসা সাধারণ মানুষদের। দালালদের ভোগান্তির কোন শেষ নেই বলে জানান পাসপোর্ট করতে আসা সাধারণ মানুষ।
কয়েকদিনের অনুসন্ধানে দেখা যায়, চাঁপাই নবাবগঞ্জ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের আশেপাশে গড়ে উঠেছে মার্কেট। পাসপোর্ট অফিসের সামনে এসব দোকানঘর ঘিরেই তৎপর পাসপোর্ট দালাল চক্রের সদস্যরা। বিভিন্ন সেবাগ্রহীতার সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। দেখা গেছে, চাঁপাই নবাবগঞ্জ পাসপোর্ট অফিসের সামনে গড়ে ওঠা মার্কেটেই পাসপোর্ট দালালদের আনাগোনা। বেশির ভাগ পাসপোর্ট প্রত্যাশী পাসপোর্টের ফরম পূরণ করতে গিয়েই দালালের ফাঁদে পড়ছেন। ফরম পূরণ শেষ হলেই দ্রুততম সময়ে পাসপোর্ট করার অফার দেন দালালগুলো। পাসপোর্ট-সংক্রান্ত বিভিন্ন কাজের জন্য টাকার অঙ্ক ভিন্ন রকমের। সিরিয়াল ও কোন প্রকার বিড়ম্বনা ছাড়া আবেদন জমা করতে ১ হাজার থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা নেওয়া হচ্ছে। পাসপোর্টের বিভিন্ন ভুল সংশোধনের জন্য চাওয়া হচ্ছে ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকার বেশি।
পাসপোর্ট করতে আসা বিভিন্ন ব্যক্তির ফাইল দালালেরা জমা দিচ্ছেন বিভিন্ন ছাত্রলীগ, যুবলীগের নাম ভাঙিয়ে। এ যেন দেখার কেউ নেই। অফিস কর্মকর্তারা দালালদের কথা মতো কাজ না করলেই শুরু হচ্ছে হট্টগোল। যার ফলে পাসপোর্ট অফিসের কর্মকর্তারা সঠিকভাবে পাসপোর্ট করতে আসা ব্যক্তিদের সেবা প্রদান করতে পারছেনা। দালালদের প্রভাবে চাঁপাইনবাবগঞ্জ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস এক প্রকার নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়েছে।
অনুসন্ধানে আরও দেখা গেছে, ক্ষমতাসীন দলের বিভিন্ন অংগ সংগঠনের একাধিক নেতা পাসপোর্ট অফিসে দালালিতে জড়িত। ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের দালালিতে জড়িত থাকার কারণে নাগরিক অধিকার ক্ষুন্ন হচ্ছে জানিয়ে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেন সচেতন নাগরিক সমাজ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পুলিশের এক গোয়েন্দা সংস্থার পরিদর্শক জানান- রিমন, আহাদ, সজিব, ইব্রাহীম, দিলীপ, নিবাস, বাবু, মতি, শিহাব, রুবেল, শিশির, নাসির, ভুট্টুসহ ৩০ থেকে ৪৫ জন দালাল রয়েছে এ পাসপোর্ট অফিসে। পরিচয় গোপন করে এক দালালের সাথে কথা বললে তিনি বলেন, আমাদের মাধ্যমেও অফিস অতিরিক্ত ১ হাজার টাকা নেন। পাসপোর্ট প্রার্থীদের কাছে ১ হাজার টাকার উপর যতটাকা পারি আদায় করি।
পাসপোর্ট অফিসে গিয়ে জানা গেছে, দালাল সিন্ডিকেটের দাপটে চরম ভোগান্তির শিকার পাসপোর্ট প্রার্থীরা। অনুসন্ধানে জানা গেছে, ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় একাধিক প্রভাবশালী নেতা ও দালাল চক্রের সাথে সক্ষ্যতা গড়ে তুলেছে। অফিসের কোন অনুমতি ছাড়ায় অনায়াসে প্রবেশ করছে চিহ্নিত দালালরা।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌর এলাকার নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক আবেদনকারী জানান, জরুরী পাসপোর্টের জন্য ১২ হাজার টাকা দিয়েছিলাম এক দালালকে হয়রানির ভয়ে। এই অতিরিক্ত টাকা দালালের হাতে না দিলে সময়মতো হাতে পাসপোর্ট পেতাম না।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌর এলাকার চরমোহনপুরের হারুন নামের এক আবেদনকারী জানান, তিনি গত সোমবার পাসপোর্টের আবেদন জমা দিতে গিয়েছিলেন। তখনি একটি ভুল ধরা পড়েছিল। সেই সময় জয়নাল নামের অফিস সহকারী বলেছিলেন, যেগুলো ভুল হয়েছে সেগুলো ঠিক করে আনেন। তারপর আমি ভুলগুলো ঠিক করে পাসপোর্টের ফাইলটি জমা দেয়। এ ভুল ঠিক করে দিবার জন্য কয়েকজন দালাল আমাকে বিভিন্ন অফার দেয়। তারপরও নিজের চেষ্টায় পাসপোর্ট করতে পেরেছি।
সেবার মান সম্পর্কে জানতে চাইলে চাঁপাইনবাবগঞ্জ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের সহকারী পরিচালক মো. হাফিজুর রহমান বলেন, ‘পাসপোর্ট পাওয়া কিন্তু বাংলাদেশের বৈধ নাগরিকের অধিকার। আবেদন ফরমে যেসব শর্তাবলি থাকে তা সুন্দরভাবে পূরণ করে দিলে পাসপোর্ট পেতে কোনো ধরনের ঝামেলা থাকে না। যেসব আবেদনে বড় ধরনের সমস্যা রয়েছে, সেগুলোর ব্যাপারে প্রধান কার্যালয়ে কথা বলে সমাধান করা হচ্ছে।
দালালের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এই চিত্র প্রতিদিনের। তাদের ফাইল জমা না নিলেই তারা হট্টগোল করছে অফিসের মধ্যে। এ সকল সমস্যার কথা আমি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে জানিয়েছে। খুব শীগ্রই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।এখানে শুধু ফরম জমা হয় ঘুষ লেনদেনের কোন সুযোগ নেই। দালালিটা আমার অফিসের বাইরের ব্যাপার, কেউ যদি না বুঝে দালালদের টাকা দেই তাহলে আমার কি করার আছে।