ইটের খোয়া নয়, যেন পোড়া মাটি। রাস্তায় এক নাম্বার ইটের খোয়া দেওয়া হয়নি। এ রাস্তা টিকবে কতদিন তা ভাবতে হবে আমাদের।দীর্ঘদিন রাস্তার কাজ ফেলে রাখায় চলাচলে দুর্ভোগ সৃষ্টি হচ্ছে এবং চলতি বছরের শুরুতে এ রাস্তার কার্পেটিংয়ের কাজ বাকি থাকা স্থানে এক/দেড়শত ফিটের ব্যবধানে কয়েক ট্রাক নিম্নমানের খোয়া স্তূপ করে রাখা হয়। এদৃশ্য দেখে আমারা ধারনা করছিলাম এবারে হলেও এ রাস্তার কাজ পুরোদমে শেষ করবে টিকাদার। কিন্তু না, আশায় গুড়েবালি। এবারেও নিখোঁজ টিকাদার। ঝিলংজা ইউপি পরিষদ থেকে আলীর জাহাল বাজার সড়কের নির্মাণ কাজে অনিয়ম ও দীর্ঘ ৩ বছরেও কাজ শেষ না হওয়ায় ক্ষোভের সঙ্গে কথাগুলো বলেছেন পিএমখালীর ১নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক মোস্তাক আহমদ।
এ ব্যাপারে সদর উপজেলা এলজিইডি অফিসের সার্ভেয়ার শহিদুল ইসলাম বলেন, দীর্ঘদিন ধরে পড়ে থাকা এ রাস্তার কাজ শেষ করতে ঠিকাদারকে বারবার তাগাদা দিয়ে আসছিলেন।এই কয়দিন আগে ঠিকাদারের সাথে দেখা হলেই বাকি রাখা রাস্তাটির ব্যাপারে জানতে চান।এ সময় কয়েক দিনের মধ্যেই এ রাস্তার অসমাপ্ত কাজ শেষ করে দিবে বলে জানান ঠিকাদার।
ছনখোলা পশ্চিম পাড়া গ্রামের ইমাম শরীফ বলেন, ‘রাস্তা ও কালভার্ট নির্মাণে যে কাজ হয়েছে তা অত্যন্ত নিম্নমানের। এ ব্যাপারে সরেজমিন দেখে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট।
ছনখোলা মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ১০ শ্রেণীর শিক্ষার্থী লাইলা আক্তার(ছদ্মনাম) বলেন, কয়েক বছর ধরে এ রাস্তার কাজ শেষ না হওয়ায় চরম ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে সবাইকে ।
পিএমখালী বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক (সাবেক) আনোয়ার পারভেজ বলেন, দীর্ঘদিন ধরে রাস্তার কাজ পড়ে থাকায় বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষের আসা-যাওয়া, করতে সমস্যা হচ্ছে এবং লেখাপড়া- ব্যবসা বাণিজ্য ব্যাহত হচ্ছে। তাই রাস্তার কাজ দ্রুত সম্পন্ন করা জরুরী’।
এলজিইডি সূত্রে জানা যায়, গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ২০২০-২১ অর্থ বছরে কক্সবাজার সদর উপজেলার ঝিলংজা ইউপি পরিষদ হইতেক আলীর জাহাল বাজার (ঝিলংজা ইউপি’র চাঁদের পাড়া রবার ড্রাম থেকে ছনখোলা খেয়া ঘাট পর্যন্ত) সড়কের তেত্রিশশত মিটার (প্রায় পৌনে ৩ কিলোমিটার) রাস্তা ও কালভার্ট নির্মাণের দরপত্র আহবান করে এবং ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স আসাদ এন্টারপ্রাইজ ঠিকাদার নিযুক্ত হয়। প্রকল্পের মেয়াদ ছিল ৬ মাস। কার্যাদেশ অনুযায়ী আড়াইবছর আগে কাজের মেয়াদ শেষ হয়ে গেলেও ঠিকাদারের খামখেয়ালিপনা ও স্বেচ্ছাচারিতায় রাস্তার কাজ সম্পন্ন হয়নি। এ সড়কটি দিয়ে খুরুশকুল ইউনিয়নের একাংশের শতশত মানুষ হেঁটে ও বিভিন্ন প্রকার যানবাহনে প্রতিনিয়ত যাতায়াত করে আসছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, এ কাজের ঠিকাদার আসাদ শুরু থেকেই কাজ করা নিয়ে গফিলতি করেন এবং গত তিন বছরে মাত্র ৬০ ভাগ কাজ সম্পন্ন করে। কাজের মান নিয়েও রয়েছে গুরুতর অভিযোগ। নিম্নমানের ইট, খোয়া ও বিটুমিন ব্যবহার করা হচ্ছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। দীর্ঘদিন কাজ বন্ধ রাখার পর চলতি বছরের শুরুতে হঠাৎ রাস্তার অসম্পূর্ণ স্থানসমূহের মধ্যে মানহীন খোয়ার স্তূপ করে রাখা হয়। এরপর আবারো লাপাত্তা হয়ে যায় ঠিকাদার। যাতায়াতের একামাত্র সড়টির বেহাল দশায় ও ধুলাবালিতে ক্ষুদ্ধ এলাকাবাসি। এ সড়কটি দিয়ে চলাচল করতে গিয়ে বেশ কয়েকটি দূর্ঘটনাও ঘটে। বিশেষ করে রোগী ও শিশু -শিক্ষার্থীদের চলাচলে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
এ ব্যাপারে সচেতন মহলের পক্ষে সমাজকর্মী আলহাজ্ব আব্দুল হাকিম বলেন, ঠিকাদার এ প্রকল্পের কাজ নিয়ে গাফিলতি করছেন এবং দীর্ঘদিন রাস্তার কাজ ফেলেও রাখার কারণে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি হয়েছে। এলাকার মানুষ এ দুর্ভোগ থেকে মুক্তি চায়’।
নতুন প্রকল্পের কাজ শুরু অথচ দীর্ঘদিন ধরে ফেলে রাখা রাস্তার কাজ শেষ না করার বিষয়ে জানতে মেসার্স আসাদ এন্টারপ্রাইজ এর স্বত্বাধিকারী অভিযুক্ত ঠিকাদার আসাদ মুঠোফোনে (০১৮১৯৬৩৩০৮৬)
সন্তোষ জনক উত্তর দেইনি। প্রতিবেদককে জানিয়ে দেন, এ বিষয়টি দৈনিক কক্সবাজার ও ঢাকা’র যে পেপার আছে সবগুলোতে বড় অক্ষরে ছাপিয়ে দেন।
পিএমখালী ইউনিয়নের মুহসিনিয়া পাড়াতে একটি রাস্তার কাজ করছে এ ঠিকাদার। রাস্তাটির কাজ শেষ করে এলাকার মানুষের সুবিধার্থে পূর্বের অসম্পূর্ণ সড়কটির কাজও দ্রত শেষ করে দেওয়া হবে বলে প্রতিবেদককে জানান স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) কক্সবাজার সদর উপজেলা প্রকৌশলী মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম।