বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম-তুমব্রু সীমান্তে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে সামরিক জান্তা বাহিনীর সঙ্গে স্বাধীনতাকামী সংগঠন আরকান আর্মির মধ্যে তুমুল লড়াই চলছে। রাতভর চলমান সংঘর্ষে সীমান্তবর্তী ক্যাম্প দখলকে কেন্দ্র করে উভয়ের মধ্যে ব্যাপক গোলাগুলি হয়েছে।
শনিবার (৩ ফেব্রুয়ারি) বিকালে থেকে থেমে থেমে গোলাগুলি হলেও রোববার (৪ ফেব্রুয়ারি) ভোর রাত থেকে লাগাতার গোলাগুলি, মার্টারশেল নিক্ষেপ ও রকেট লান্সার বিস্ফোরণের বিকট শব্দে কেপে ওঠে সীমান্তবর্তী নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম-তুমব্রুর বিস্তীর্ণ এলাকা।
গোলাগুলির সময় রকেট লান্সার উড়ে এসে পড়েছে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ঘুমধুম-তুমব্রু এলাকায় বসতঘরের উপরও।
এ ঘটনায় কোনো হতাহতের ঘটনা না হলেও আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে এলাকাবাসী। অনেকেই আতঙ্ক ও উৎকণ্ঠায় নির্ঘুম রাত কাটিয়েছে। ভয়ে ছেলে-মেয়েদের স্কুলেও পাঠাতে পারছে না অভিভাবকরা। কৃষকরা কৃষি ক্ষেতে যেতে ও দৈনন্দিন কাজ করতেও ভয় পাচ্ছে।
তুমব্রু এলাকার বাসিন্দা রূপলা ধর বলেন, ভোর থেকে ব্যাপক গোলাগুলির শব্দ হচ্ছে। পরিবারের সবাই না ঘুমিয়ে বসে আছি। অনেক ভয় হচ্ছে, কখন কোন সময় কী হয় তা আমরা জানি না।
তিনি আরও বলেন,আমাদের পাশের এলাকার এক ঘরের চালায় বিস্ফোরিত রকেট লান্সার এসে পড়েছে। অনেকের উঠানে গুলিও এসে পড়েছে। এখন ঘরের বাইরে যেতেও ভয় হচ্ছে।
এ বিষয়ে ঘুমধুম ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আজিজ বলেন, রোববার ভোর থেকে মিয়ানমার সীমান্তের অভ্যন্তরে ব্যাপক গোলাগুলি হচ্ছে। এতে বিকট শব্দে কেপে উঠছে আমাদের ঘুমধুম-তুমব্রু সীমান্তবর্তী এলাকা। এলাকাবাসীদেরকে বিনা প্রয়োজনে ঘর থেকে বের না হওয়ার জন্য বলা হয়েছে।
এদিকে বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী মিয়ানমারের অংশে ব্যাপক গোলাগুলি ও বোমা বর্ষণ হচ্ছে। শনিবার (৩ ফেব্রুয়ারি) দিবাগত রাত ৩টা থেকে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম ও তুমব্রু সীমান্তে থেমে থেমে গুলি ও বোমা বর্ষণ চলছে। বেশ কয়েকটি গুলি ও মর্টারশেল এসে পড়েছে বাংলাদেশের ভূখণ্ডে।
এদিকে স্থানীয় বাসিন্দাদের দেওয়া তথ্য মতে, বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি তুমব্রু সীমান্তে মিয়ানমার থেকে ছোড়া গুলিতে দুই বাংলাদেশি আহত হয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে।
আহত হয়েছেন প্রবীর চন্দ্র ধর ও একজন নারী (নাম-পরিচয় জানা যায়নি)। তারা দুজনেই তুমব্রু সীমান্তের হিন্দু পাড়ার বাসিন্দা বলে নিশ্চিত করেছেন ঘুমধুম পুলিশ ফাঁড়ি তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ মাহাফুজ ইমতিয়াজ ভুঁইয়া। গোলাগুলিতে কোনাপাড়ার কয়েকটি ঘর-বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
এদিকে গোলাগুলি ও সংঘর্ষে প্রাণহানির শঙ্কায় মিয়ানমারের বর্ডার গার্ড পুলিশ বিজিপির ১৪ জনেরও বেশি সদস্য বাংলাদেশের ভূখণ্ডে আশ্রয় নিয়েছে বলে জানা গেছে। তাদের ঘুমধুম বিজিবি ক্যাম্পে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
সীমান্ত পথে আরও ৩০ জনেরও বেশি বিজিপি সদস্য বাংলাদেশে ঢোকার জন্য অবস্থান নিয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। ঘুমধুম ইউপি চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আজিজ জানিয়েছেন, মিয়ানমারের বিজিপির সদস্যরা তুমব্রু সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে।
এদিকে উত্তেজনা বৃদ্ধির কারণে সীমান্তের ১০০ গজ দূরত্বে থাকা মিশকাতুন নবী দাখিল মাদরাসা বন্ধ করে দেওয়ার কথা জানান বান্দরবান জেলা শিক্ষা অফিসার মুহাম্মদ ফরিদুল আলম হোসাইনী।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আবদুল মান্নান বলেন, আজ সকাল থেকে মিয়ানমারের সীমান্ত এলাকার অভ্যন্তরে গোলাগুলি বৃদ্ধি পাওয়ায় সীমান্ত এলাকার বাইশ ফাঁড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ভাজা বনিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, তুমব্রু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পশ্চিম কুল তুমব্রু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও দক্ষিণ গুমধুম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়েছে।
এদিকে বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড বিজিবি সীমান্তে নিরাপত্তা বাড়িয়েছে। নিরাপত্তা চৌকিগুলোতে সদস্য সংখ্যা বাড়িয়ে টহল বৃদ্ধি করা হয়েছে। সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় রয়েছে বিজিবি।
সীমান্ত পরিস্থিতি বিবেচনায় নিরাপত্তার বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে বলে জানানো হয় জেলা প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিভাগ থেকে। এদিকে সীমান্তের সার্বিক বিষয় নিয় দুপুরে তুমব্রু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করা হবে বলে জানানো হয়েছে ৩৪ বিজিবির পক্ষ হতে।
এ নিয়ে পরে সংবাদ সম্মেলন করে বিস্তারিত জানাবে বিজিবি ৩৪ ব্যাটালিয়ন।