মেয়র তাপসের উন্নয়ন পরিকল্পনায় আশ্বস্ত হয়েছিঃ এ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম
“কামরাঙ্গীরচরে বসবাসরত কাউকে উচ্ছেদ করা হবে না” বলে আশ্বস্ত করেছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ঢাদসিক) মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস। এ সময় তিনি সেখানে বসবাসরত সবাইকে অমূলক অপপ্রচারে বিভ্রান্ত না হতেও অনুরোধ করেছেন।
গতকাল ৫ মে (রবিবার) বিকালে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান কার্যালয় নগর ভবনের মেয়র হানিফ মিলনায়তনে “কামরাঙ্গীরচরকে নান্দনিক, বাসযোগ্য ও বুদ্ধিদীপ্ত (Smart) এলাকা হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষে উন্নয়ন পরিকল্পনা” শীর্ষক এক মতবিনিময় সভায় ঢাদসিক মেয়র ব্যারিস্টার শেখ তাপস এসব কথা বলেন।
ঢাদসিক মেয়র ব্যারিস্টার শেখ তাপস বলেন, “আপনাদের মধ্যে একটি শঙ্কা আছে যে, কামরাঙ্গীরচরের যে উন্নয়ন পরিকল্পনা করা হয়েছে তা বাস্তবায়নের জন্য আপনাদেরকে উচ্ছেদ করা হবে। আমি আগেও পরিষ্কার করেছি আবারো বলছি, সেখান থেকে কাউকে উচ্ছেদ করা হবে না। এই উন্নয়ন পরিকল্পনা আপনাদের জন্য। সেখানে আপনারা থাকবেন, আপনাদের পরিবার থাকবে, আপনাদের বংশধরেরা থাকবে। কিন্তু আপনারা অমূলক অপপ্রচারে বিভ্রান্ত হবেন না।”
কামরাঙ্গীরচর কেন্দ্রিক উন্নয়ন পরিকল্পনা তুলে ধরে ঢাদসিক মেয়র ব্যারিস্টার শেখ তাপস বলেন, “আমরা পোস্তগোলা থেকে রায়ের বাজার পর্যন্ত ৮ সারির ইনার সার্কুলার রোড করছি। কামরাঙ্গীরচরবাসী সেই সড়কের সুফল ভোগ করবে। এছাড়া কামরাঙ্গীরচরের ৫৫ নম্বর ওয়ার্ডে ঝাউচর সড়ক ৬ সারিতে উন্নীত করার জন্য কাউকে উচ্ছেদের প্রয়োজনই হবে না। দ্বিতীয়ত, ৫৬ নম্বর ওয়ার্ডে নদীর পাড় ঘেঁষে ৪ সারির যে সড়ক প্রশস্ত করা হচ্ছে সেখানে ব্যক্তি মালিকানাধীন কারো কোন এক ইঞ্চি জমিও পড়ছে না। তৃতীয়ত, ৫৭ নম্বর ওয়ার্ডে ৮ সারির সড়ক প্রশস্ত করার জন্য মাত্র ৩.৪ একর জমি অধিগ্রহণ করতে হবে। বাকীটা পুরোটাই সরকারি জমি। সেই ৩.৪ একর জমিতে যাদের বাড়ি পড়বে আমরা তাদেরকে সরকারি নিয়মে ক্ষতিপূরণ তো দেবোই। পাশাপাশি আমি আর কামরুল চাচা (এ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম) তাদের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করব। সুতরাং, অহেতুক শঙ্কার কোন প্রয়োজনীয়তা নেই।”
কেন কামরাঙ্গীরচরে উন্নয়ন পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে তার যথার্থতা তুলে ধরে ঢাদসিক মেয়র ব্যারিস্টার শেখ তাপস বলেন, “একটি বিষয় আপনারা নিশ্চয় অনুধাবন করবেন, আজ নতুন প্রজন্মের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ পুরাতন ঢাকায় থাকেন না। তারা হয় নতুন ঢাকা নয়তো উত্তরার মতো জায়গায় বসবাস করেন। এর মূল কারণ হলো, পুরাতন ঢাকা বাসযোগ্যতা হারিয়েছে। কামরাঙ্গীরচরের যে অবস্থা, তাতে সেখানে বাসযোগ্যতা হলো তিন লক্ষ মানুষের। কিন্তু আপনাদের কথামতো সেখানে বসবাস করে ২০ লক্ষ মানুষ। সুতরাং এখনই যদি কোনো পদক্ষেপ না নেওয়া হয় তাহলে কামরাঙ্গীরচরও অচিরেই বাসযোগ্যতা হারাবে। সেজন্যই আমাদের এই উন্নয়ন পরিকল্পনা। তবে আমি আপনাদের আবারও আশ্বস্ত করছি, সেখান থেকে কাউকে অন্যায়ভাবে, অবৈধভাবে উচ্ছেদ করা হবে না।”
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামন্ডলীর সদস্য এ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম বলেন, “উনি আমাদের যে উন্নয়ন পরিকল্পনা দেখিয়েছেন তাতে আমাদের মাঝে যে দ্বিধা-দ্বন্দ্ব, ভয়-ভীতি ছিলো তা অনেকাংশেই কমে এসেছে। এই উন্নয়ন পরিকল্পনায় তিনটা সড়ক প্রশস্ত করা হচ্ছে। সুতরাং, আমরা মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপসের বক্তব্যে আশ্বস্ত হয়েছি। তারপরও আমি বলবো, আমার নামে যে ১০৪ ফুটের সড়ক প্রশস্ত করা হবে তাতে ৩.৪ একর জমি অধিগ্রহণের প্রয়োজন হবে। সেসব জমির মালিকদের সরকারি নিয়মানুযায়ী ক্ষতিপূরণ দেওয়ার পাশাপাশি তাদেরকে কামরাঙ্গীরচরের অন্যান্য সরকারি জমিতে পুনর্বাসন করা যায় কিনা সেটা আপনি বিবেচনা করবেন। আমি আশাবাদী, আপনি সহযোগিতা করবেন। ”
অনুষ্ঠানে কামরাঙ্গীরচরবাসীর পক্ষে ঢাদসিক মেয়রের কাছে লিখিত স্মারকলিপি হস্তান্তর করা হয়।
মতবিনিময় সভায় অন্যান্যের মাঝে করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান, সচিব আকরামুজ্জামানসহ করপোরেশনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ, ঢাদসিক’র ৫৫, ৫৬ ও ৫৭ নম্বর ওয়ার্ড ও সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলরবৃন্দ, রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।