কুড়িগ্রাম জেলার উলিপুর থানায় সালিশ শেষে প্রতি পক্ষের হামলায় পৌর যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক আশরাফুল আলম (৪০) নামের এক যুবককে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগে বলা হয় বিএনপির রংপুর বিভাগীয় সহ সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল খালেক এর সমর্থকরা পিটিয়ে হত্যা করে জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও সদ্য ঘোষিত আহ্বায়ক কমিটির সদস্য তাসভিরুল ইসলামের পক্ষের যুবদল নেতা আলমকে। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে হামলায় জড়িত থাকার অভিযোগ তুলে উত্তেজিত কর্মীরা প্রতিপক্ষের ব্যাবসা প্রতিষ্ঠান ভাংচুর ও বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করেছেন। নিহতের পিতা আয়নাল হক বাদি হয়ে শনিবার (২৮ ডিসেম্বর) ২০জনের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাত আরো ২৫জনসহ ৪৫ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেন। শনিবার বাদ আসর কাজিরচর মসজিদ প্রাঙ্গণে নামাজের জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। পুলিশ আসামীদের গ্রেপ্তার করতে না পারলেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোড়দার করেছে। বৃদ্ধি করেছে পুলিশি টহল।
উলিপুর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুর রহমান বুলবুল সাংবাদিকদের জানান, বিএনপির রংপুর বিভাগীয় সহ সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল খালেক এর সমর্থকরা তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে পৌর যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক আশরাফুল আলমকে পিটিয়ে হত্যা করে শুক্রবার দিবাগত রাত সাড়ে ৭টার দিকে।
তিনি সালিশে উপস্থিত নেতা কর্মীদের বরাতে আরো জানান-উপজেলার বুড়াবুড়ি ইউনিয়নের দোলন এলাকার এক ছেলেকে গুনাইগাছ ইউনিয়নের নন্দুনেফড়া এলাকার এক মেয়ের সাথে (২৫ ডিসেম্বর) রাতে বিয়ে দেয়ার চেষ্টা করা হয়। এ ঘটনায় ওই ছেলের পিতা ছাত্রদলের এক নেতা সহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ করেন। ঘটনা মিমাংসার জন্য শুক্রবার (২৭ ডিসেম্বর) থানার গোল ঘরে উভয় পক্ষ মিমাংসায় বসেন। এ সময় রংপুর বিভাগীয় সহ সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল খালেকের পক্ষের লোকজন ছেলের পক্ষে অবস্থান নেন এবং জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও সদ্য ঘোষিত জেলা আহ্বায়ক কমিটির সদস্য তাসভিরুল ইসলামের পক্ষের লোকজন ছাত্রদল নেতার পক্ষে অবস্থান নিয়ে সালিশে বাকবিতন্ডায় জড়িয়ে পড়েন। এরই এক পর্যায়ে এক গ্রুপ অপর গ্রুপের উপর হামলা চালান। এসময় পৌর যুবদলের যুগ্ন আহ্বায়ক আশরাফুল আলম ও উপজেলা যুবদলের যুগ্ন আহ্বায়ক আবুল হাসনাত রাজিব সহ কয়েকজন আহত হন। হামলার সময় ঘটনা স্থলে আশরাফুল আলম মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। সহকর্মীরা তাকে দ্রুত উলিপুর হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষনা করেন। নিহত আশরাফুল পৌরসভার কাজিরচর এলাকার ডিস ব্যবসায়ী আয়নাল হকের এক মাত্র পুত্র।
অভিযোগে জানাযায়, আশরাফুল আলমের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পরলে তাসভীরুল ইসলামের সমর্থকেরা ক্ষুদ্ধ হয়ে আব্দুল খালেকের সমর্থক আমিনুল ইসলামের শুভেচ্ছা হোটেল ভাংচুর করেন। এরপর হত্যার সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে জেলা কৃষকদলের যুগ্ন আহ্বায়ক আবু জাফর সোহেল রানা ও সাবেক ছাত্রদল নেতা ফিরোজ কবির কাজলের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করেন। এ সময় অগ্নিকান্ড এবং ভাংচুরের ঘটনায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি সংঘঠিত হয়। পরে ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়। ঘটনার পর থেকে ভুক্তভোগী পরিবারগুলো বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। তাদের ফোনও বন্ধ ফলে তাদের মতামত জানা সম্ভব হয়ান।
উলিপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার মেহেরুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, আশরাফুল ইসলাম নামের এক যুবকে হাসপাতালে নেয়া হয় রাত আনুমানিক ৮টার দিকে। পরীক্ষা করে দেখা যায় হাসপাতালে আসার আগেই তার মৃত্যু হয়েছে।
উলিপুর থানার অফিসার ইনচার্জ জিল্লুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, ঘটনার সময় আমি ছুটিতে ছিলাম। গত রাতেই কর্মস্থলে যোগদেই। ঘটনা থানা চত্বরের বাইরে ঘটেছে। আমরা বিষয়টি তদন্ত করছি। নিহতের পিতা আয়নাল হক বাদী হয়ে শনিবার ২০ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাত নামা ২৫ জনের বিরুদ্ধে উলিপুর থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। আমরা আসামীদের গ্রেপ্তারে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে অভিযান চালাচ্ছি। প্রতিপক্ষের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বাড়িঘরে হামলা ও অগ্নি সংযোগের ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু এ ব্যাপারে এখনো কেউ কোন অভিযোগ দাখিল করেনি। বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। পুলিশি টহল জোড়দার রয়েছে। বিকেল সাড়ে ৪টায় নিহতের বাড়িতে নামাজের জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন সম্পন্ন করা হয়।
উপজেলা বিএনপি সভাপতি হায়দার আলী মিয়া (০১৭১৭৭১৫৮৭৩) এবং জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি এবং বর্তমান জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য তাসভিরুল ইসলাম (০১৭১১৫২৬৪২৬) এর নম্বরে সাংবাদিকরা বারবার ফোন করলেও তারা ফোন রিসিভ করেননি।
বিএনপির রংপুর বিভাগীয় সহ সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল খালেক (০১৭১৭০৬২১৭৭) তার নম্বরে সাংবাদিকদের ফোন রিসিভ করলেও এ ব্যাপারে বক্তব্য দিতে রাজি হননি।